• সাভার

  •  শনিবার, জুলাই ২৭, ২০২৪

নগর জুড়ে

মানিকগঞ্জে এক স্কুলের সবাই ফেল, ব্যাখ্যা চাইল প্রশাসন

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: ০৯:৩১, ১৭ মে ২০২৪

মানিকগঞ্জে এক স্কুলের সবাই ফেল, ব্যাখ্যা চাইল প্রশাসন

মানিকগঞ্জে এক স্কুলের সবাই ফেল, ব্যাখ্যা চাইল প্রশাসন

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার চড় মাইজখাড়া ‘বেগম রূপবান মাধ্যমিক বিদ্যালয়’ থেকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে শতভাগ অকৃতকার্য হয়েছে। এই বিদ্যালয়ে আটজন শিক্ষক থাকা সত্বেও চলতি বছরে ১১ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিলেও কেউ কৃতকার্য হতে পারেনি।

এ ঘটনায় শিক্ষকদের কাছ থেকে ব্যাখ্যা চেয়েছে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ওই বিদ্যালয়ে পরিদর্শন শেষে শিক্ষকদের এ কারণ দর্শাতে বলেছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আমির হোসেন। এসময় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলছেন। উপস্থিত ছিলেন ঘিওর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা একাডেমিক সুপারভাইজার মেহেনাফ ফেরদৌসসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাগণ। বিদ্যালয় পরিদর্শন শেষে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আমির হোসেন বলেন, ‘বিদ্যালয়ের  শিক্ষকদের কারণ দর্শানো দিয়ে তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।

জবাব সন্তোষজনক না হলে পাঠদানের অনুমতি বাতিলসহ শিক্ষকদের বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্ম সচিব ওই এলাকার বাসিন্দা মো.আব্দুর রাশেদ খান ২০০৮ সালে তাঁর মায়ের নামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিবেশী কয়েকজনের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ চলায় ওই বিদ্যালয়ে বাইরের কেউ ভর্তি হতে গেলে নানা ধরনের বাধার মুখে পড়ায় বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকের পাশাপাশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে অনেক কম। শিক্ষকসহ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে ঠিকমত আসেন না। এরই মধ্যে গত বছরের ৮ মার্চ বিদ্যালয়ে আগুন লেগে জরুরি কাগজপত্রসহ অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। 

স্থানীয় খাগ্রাটা গ্রামের বাসিন্দা ও এসএসসি পরীক্ষায় কৃতকার্য না হওয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক অভিযোগ করেন, ‘এই বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস হয় না।  শিক্ষার্থী এলেও শিক্ষকেরা আসেন না। বিষয়টি একাধিকবার পরিচালনা কমিটিকে অবগত করার পরও লেখাপড়ায় কোন উন্নতি হয়নি। এই স্কুলে ভর্তি হয়ে আমার সন্তানের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে গেল।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে নিয়মিত শিক্ষকরা না আসায় ঠিকমত ক্লাস হয় না। আমাদের স্কুলে গণিত ও ইংরেজির শিক্ষক না থাকায় আমরা ঠিকমত বুঝতে পারিনি। অন্য স্কুলে গিয়ে বুঝতে চেয়েছিলাম কিন্তু প্রধান শিক্ষক আমাদের যেতে দেননি।

পড়ালেখার প্রতি শিক্ষকদের অবহেলার কারণে আমরা আজ ফেল করেছি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, বেগম রূপবান মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে চলতি বছরে ১১ জন এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। যারা পরীক্ষা দিয়েছে তাদের প্রত্যেকে একাধিক বিষয়ে ফেল করেছেন। তবে গণিতে ফেল করেছে সবাই।  ইংরেজিতে নয় জন এবং পৌরনীতিতে একজন ফেল করে। বেগম রূপবান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদুল হক তোতা বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয় থেকে চলতি বছরে এবারেই প্রথম ১১ জন এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। আমাদের বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত না হওয়ায় যে কয়জন শিক্ষক আছেন তারা ঠিকমত বেতন ভাতা পান না।

আমাদের বিদ্যালয়ে গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে কোন শিক্ষক না থাকায় এই দুই বিষয়ে বেশি ফেল করেছেন। তবে আগামীতে আমরা ভুলগুলো সংশোধন করে ভাল রেজাল্ট করার যতসাধ্য চেষ্টা করবো।’ বেগম রূপবান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. আব্দুর রাশেদ খান বলেন, শিক্ষকদের ঢিলেঢালা পাঠদান এবং শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার প্রতি অনিহার কারণে খারাপ রেজাল্ট হয়েছে। তবে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে আগামীতে ভালো পাঠদানের মাধ্যমে ভাল রেজাল্ট করা হবে। ঘিওর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানটিকে কারণ দর্শানোর ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। জবাব সন্তোষজনক না হলে পাঠদানের অনুমতি বাতিল করা হবে।’

মন্তব্য করুন: