• সাভার

  •  শনিবার, জুলাই ২৭, ২০২৪

নগর জুড়ে

ধামরাইয়ে হেলে পড়া ভবনটি অবৈধ, অনুমোদন নেই প্রকল্পেরও

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: ০৮:০৯, ১৪ মে ২০২৪

ধামরাইয়ে হেলে পড়া ভবনটি অবৈধ, অনুমোদন নেই প্রকল্পেরও

ধামরাইয়ে হেলে পড়া ভবনটি অবৈধ, অনুমোদন নেই প্রকল্পেরও

নিচু কৃষিজমিতে অনুমোদন ছাড়াই গড়ে তোলা হয়েছিল ঢাকার ধামরাইয়ে ধানসিঁড়ি হাউজিং প্রকল্প। আর ১১ মে ওই প্রকল্পে হেলে পড়া ভবনটিরও নেই সরকারি অনুমোদন। পৌর কর্তৃপক্ষ, উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, প্রায় ১৫ বছর আগে ধামরাই উপজেলার ঢুলিভিটা বাসস্ট্যান্ডের পার্শ্ববর্তী এলাকায় কয়েক একর জমিতে গড়ে ওঠে ধানসিঁড়ি হাউজিং প্রকল্প। পুরো প্রকল্প গড়ে তোলায় নেতৃত্ব দেন ধামরাই পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মোকছেদ। রাজউক, হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন ও ধামরাই উপজেলা প্রশাসন বলছে, ওই আবাসিক এলাকার কোনো সরকারি অনুমোদন নেই। এমনকি ওই আবাসন প্রকল্পের অন্যতম উদ্যোক্তা কাউন্সিলর মো. মোকছেদও এ বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। সরেজমিনে দেখা যায়, ঢুলিভিটা-শরীফবাগ সড়কের ঢুলিভিটা বাসস্ট্যান্ডের ১০০ গজের মধ্যেই শরীফবাগগামী লেনের পাশে ধানসিঁড়ি হাউজিং প্রকল্পের প্রধান গেট। গেটটি থেকে ৫০ থেকে ৬০ গজ দূরেই ডান লেনের পাশে এক সারিতে তিনটি ভবন।

জানা গেছে, প্রথম ভবনের প্লটটি ছিল ছয় শতাংশ আকারের। পৌরসভা থেকে এই জমিতে ছয় তলা ভবন নির্মাণের অনুমোদন নিয়ে ৭০ ফুট পাইলিং করা হয়। সেই পাইলিং করা জমি চার শতাংশ ও দুই শতাংশ আকারে কিনে নেন মো. রফিক ও মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন। এর মধ্যে রফিক সড়কের সামনে তিন তলা ভবন নির্মাণ করেন। আর পেছনে দুই শতাংশ জমিতে চার তলা ভবন নির্মাণ করেন জিয়াউদ্দিন। আর এই প্লটের পাশেই ১০ ফুট সড়কের জায়গা রেখে আরেকটি ছয় তলা ভবন নির্মাণ করেন সামসুল হক নামে এক ব্যক্তি। পরে ১০ ফুট সড়কের জায়গাটি আবাসন প্রকল্পের কাছ থেকে কিনে নেন জিয়া। সেখানেই করিডোর আকারের ১০ ফুট চওড়া ও ৩০ ফুট লম্বা আরেকটি চার তলা ভবন নির্মাণ করেন জিয়া। ওই করিডোর দিয়েই মূল ভবনে প্রবেশ করতে হয়। দুই ভবনের মাঝখানে থাকা এই করিডোর আকারের ভবনটিই শনিবার হেলে পড়ে।

ভবনটিতে গিয়ে দেখা যায়, করিডোর আকারের ভবনটির চতুর্থ তলার একটি অংশ হেলে পড়েছে পাশের ছয় তলা ভবনের ওপর। এতে তৃতীয় তলায় বারান্দার সানসেটে ফাটল ধরেছে। শনিবার ভবনটি হেলে পড়ার পরপরই কক্ষগুলোর বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়েছে উপজেলা ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। ধানসিঁড়ি হাউজিং প্রকল্পের বরাত দিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষ জানায়, ছয় শতাংশ প্লটটিতে ছয় তলা ভবনের অনুমোদন ছিল। তবে সেখানে আলাদা ভবনের কথা জানে না পৌর কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রাথমিকভাবে এটিকে অবৈধ বলেছেন ধামরাই পৌরসভার মেয়র গোলাম কবীর। ধামরাই পৌরসভার মেয়র গোলাম কবীর বলেন, ’ধানসিঁড়ি হাউজিংয়ের ১০ ফুট রাস্তায় তারা নিয়ম না মেনে ভবনের এ অংশ (হেলে পড়া) বর্ধিত করেছে। বর্ধিত অংশের কোনো অনুমোদন নেই। এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তবে বাড়ির মালিক জিয়াউদ্দিন বলেন, ‘ছয় শতাংশজুড়েই ভবন নির্মাণের অনুমোদন রয়েছে। ফলে আলাদা করে দুই শতাংশের জন্য কোনো অনুমোদন নিইনি।’ তার দাবি, সড়কের রেকর্ডীয় জমিটি পরে ধানসিঁড়ি হাউজিং প্রকল্পের অন্যতম মালিক মো. মোকছেদের মাধ্যমে কিনে নেন তিনি। সেখানেই ভবন নির্মাণ করেন। শনিবার হেলে পড়ার পরপরই ভবনের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। রবিবার ভবনের সামনে গিয়ে দেখা যায়, কক্ষগুলো থেকে নিজেদের জিনিসপত্র সরিয়ে নিচ্ছেন ভাড়াটিয়ারা। ভাড়াটিয়া মোরসালিনা আক্তার বলেন, ‘হঠাৎ করেই শুনলাম ভবন হেলে পড়েছে। প্রশাসন সরে যেতে বলেছে। অন্যত্র বাসা নিয়েছি। সব সরিয়ে নিচ্ছি।’ একই অবস্থা অন্য ভাড়াটিয়াদেরও। তবে কয়েকজনকে বাসা না পেয়ে বাইরেই জিনিসপত্রসহ অপেক্ষা করতে দেখা যায়।

মন্তব্য করুন: