• সাভার

  •  বুধবার, ডিসেম্বর ৬, ২০২৩

নগর জুড়ে

আশুলিয়ায় স্বামী-স্ত্রী-সন্তান খুন : কারা এসেছিল বাসায়?

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: ১৯:০০, ১ অক্টোবর ২০২৩

আশুলিয়ায় স্বামী-স্ত্রী-সন্তান খুন : কারা এসেছিল বাসায়?

আশুলিয়ায় স্বামী-স্ত্রী-সন্তান খুন : কারা এসেছিল বাসায়?

দরজা ধাক্কা দিতেই খুলে যায়। ফ্ল্যাটে ঢুকতেই কক্ষের বিছানায় মেলে মা শাহিদা বেগম ও ১২ বছরের ছেলে জয়ের গলা কাটা রক্তাক্ত মরদেহ। তার পাশের কক্ষ থেকে গামছা দিয়ে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় স্বামী মোক্তারুল হোসেন বাবুলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আশুলিয়ায় পোশাক শ্রমিক দম্পতি ও শিশুকে হত্যার কোনো কিনারা করতে পারছে না পুলিশ। দুর্গন্ধের উৎসের খবর নিতেই শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টায় বেরিয়ে আসে লোমহর্ষক এই ঘটনা। পুলিশের ধারণা, দু-এক দিন আগে তাদের হত্যা করা হয়েছে। ঘরে ছিল রান্না করা খিচুড়ি। এ ছাড়া চা খাওয়া হয়েছে এমন পাঁচ-ছয়টা কাপও ছিল।
 
আশুলিয়ার উত্তর গাজীরচটে শেখ মেহেদী হাসানের ছয়তলা ভবনের চার তলার একটি ফ্ল্যাটে প্রায় আট বছর ধরে এই দম্পতি বসবাস করে আসছিল। তারা পেশায় পোশাক শ্রমিক। মরদেহ উদ্ধার করে রবিবার (১ অক্টোবর) সকালে তাদের মরদেহ ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে রাতে ছুটে আসেন জেলা পুলিশ সুপার, র‍্যাব কর্মকর্তা ও সিআইডির দল। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে জানায়, এমন ভয়ংকর ঘটনার টুঁশব্দটিও যেন প্রতিবেশীসহ কেউ টের পেলেন না! তাহলে তাদের চেতনানাশক কোনো কিছু খাওয়ানো হয়েছিল। তারপর তাদের তিনজনকেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। ঘরে রান্না করা খিচুড়ি ছিল। এ ছাড়া পাঁচ থেকে ছয়টা কাপ রয়েছে, যেগুলোতে চা খাওয়া হয়েছে- এমন চিত্রও দেখা গেছে।

পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে অতিথি হিসেবে হয়তো খুনিরা ঘরে প্রবেশ করেছিল। গ্রেপ্তারের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাবুল ও শাহিদা পরস্পরকে পছন্দ করে বিয়ে করেছিলেন। এ দম্পতির ১২ বছরের ছেলে জয় আশুলিয়ার স্থানীয় এক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল। হত্যার শিকার বাবুল ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জের লোহাগড়া গ্রামের মৃত সইর উদ্দিনের ছেলে। সাত ভাই-বোনের মধ্যে তিন নম্বর ছিলেন বাবুল। দরিদ্র পরিবারের বাবুল গ্রামে কৃষিকাজ করতেন। পরে প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আশুলিয়ায় পোশাক কারখানায় কাজ করেন ও স্ত্রী-সন্তানসহ বসবাস  করছিলেন। স্ত্রীও পোশাক কারখানায় চাকরি নিয়েছিলেন। নিহত বাবুলের বড় বোন মনোয়ারা বেগম বলেন, আমার ভাইটা জীবনে অনেক কষ্ট করে বড় হয়েছে। দুর্বল থেকে সবল হলো। তার পরই তাদের এভাবে মেরে ফেলল। আমার ভাইয়ের কোনো শত্রু ছিল না। থাকলে তো কখনো আমাদের একটু হলেও বলত। আমি খুনিদের ফাঁসি চাই।

প্রতিবেশীদের তাদের সঙ্গে তেমন সম্পর্ক ছিল না। ফলে নিহতদের বিষয়ে তারা কোনো তথ্য দিতে পারেননি। এই বাসায় তারা দীর্ঘ আট বছর বসবাস করে আসছিলেন। এ বিষয়ে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, হত্যাকাণ্ডের ধরন দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তাদের চেতনানাশক কোনো কিছু খাওয়ানো হয়েছিল। অচেতন করার পর তাদের হত্যা করা হয়। মরদেহ দেখে মনে হচ্ছে, প্রায় ৩৬ থেকে ৪০ ঘণ্টা আগে অর্থাৎ শুক্রবার এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। তাদের কোনো কিছু খোয়া যায়নি। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তবে এখনই সুনির্দিষ্ট কারণ বলা যাচ্ছে না। সবগুলো বিষয় মাথায় নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন: