• সাভার

  •  শনিবার, জুলাই ২৭, ২০২৪

নগর জুড়ে

ভরা মৌসুমেও ইলিশশূন্য পায়রা নদী!

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: ১০:১৭, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ভরা মৌসুমেও ইলিশশূন্য পায়রা নদী!

ভরা মৌসুমেও ইলিশশূন্য পায়রা নদী!

ভরা মৌসুমেও বরগুনার আমতলী ও তালতলী উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পায়রা (বুড়িশ্বর) নদীতে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। নদ-নদী ইলিশশূন্য হওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম হতাশায় ভুগছেন জেলেরা। পায়রা (বুড়িশ্বর) নদীর পারে বসবাসরত জেলেপল্লীগুলোর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে নদ-নদীতে ইলিশ না পাওয়ার এমন আক্ষেপই শোনা গেছে। এদিকে নদ-নদীতে আশানুরূপ ইলিশ না পাওয়ার কারণ হিসেবে কম বৃষ্টিপাত ও জলবায়ু পরিবর্তনকেই দায়ী করেছেন মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা।

জেলেরা জানান, ইলিশ শিকারের ভরা মৌসুম হলো মে মাসের মাঝামাঝি থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত। এ সময় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ সাগরের লোনা পানি থেকে মিঠা পানিতে ছুটে আসে। অক্টোবর মাসে নিষেধাজ্ঞার সময় নদীতে ডিম ছাড়ে মা ইলিশ। জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে তা ৩ থেকে সাড়ে ৩ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়।

এ সময় জেলেরা ‘বাধা’ কিংবা ‘বেড় জাল’ দিয়ে ছোট ইলিশ শিকার করেন। নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত কিছু অসাধু জেলেরা ছোট ফাঁসের কারেন্ট জাল ব্যবহার করে শুধু চাপিলা শিকার করেন। এই চাপিলাই মূলত ইলিশের বাচ্চা। এ কারণে দিন দিন ইলিশের সংখ্যা কমে গিয়ে চলতি মৌসুমে শূন্যে চলে এসেছে।

তা ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিভিন্ন নদ-নদীতে চর পড়ে গভীরতা কমে যাওয়ায় এখন আর নদ-নদীতে ইলিশের বিচরণ তেমন নেই বললেই চলে। নদ-নদী ইলিশূন্য হয়ে পড়ায় অনেক জেলে এখন ডাঙায় নোঙর করে রেখেছেন তাদের মাছ ধরা নৌকাগুলো। এমন দৃশ্য প্রায়ই চোখে পড়ে পায়রা (বুড়িশ্বর) নদীসংলগ্ন বিভিন্ন খালে। তালতলী উপজেলার পায়রা (বুড়িশ্বর) নদীপারের জয়ালভাঙ্গা গ্রামের জেলে সোলায়মান বলেন, ‘প্রতিবছর ইলিশ মৌসুমে এমন দিনে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২৫ কেজি পর্যন্ত ইলিশ মাছ পাইছি। চলতি মৌসুমে নদ-নদীতে ইলিশ নাই।

গত এক সপ্তাহে মাত্র সাতটা জাটকা ও দুটি মাঝারি সাইজের ইলিশ পাইছি। যা বাজারে এক হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি করেছি।’
আমতলী উপজেলার বৈঠাকাটা গ্রামের জেলে খলিলুর রহমান বলেন, পায়রা নদী এখন ইলিশশূন্য হয়ে পড়েছে। গত এক সপ্তাহে পাঁচ-ছয়টি জাটকা ছাড়া কোনো ইলিশ পাইনি। নদী ইলিশশূন্য হয়ে পড়ায় এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে।’

গুলিশাখালী নাইয়াড়ার জেলে রফিক বলেন, নদ-নদীতে ইলিশ না পাওয়ায় অনেক জেলে এখন মাছ ধরার নৌকা ডাঙায় নোঙর করে সংসার চালাতে কেউ অটোরিকশা ও মাঠেঘাটে বদলা হিসেবে শ্রমিকের কাজ করছেন। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ফিশারিজ টেকনোলজি ডিপার্টমেন্টের প্রধান ড. সাজেদুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘নদ-নদী থেকে ইলিশ হারিয়ে যাওয়ার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি আমরা নিজেরাও অনেকটা দায়ী। ইলিশের নিষেধাজ্ঞা পালনে আমাদের আরো বেশি কঠোর হতে হবে। ছোট ফাঁসের জাল ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে এবং জেলেদের আরো বেশি সচেতন করে তুলতে হবে।’

নদ-নদীতে ইলিশ কম থাকার কথা স্বীকার করে আমতলী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা হালিমা সরদার বলেন, এবার জুন-জুলাইয়ে তেমন বৃষ্টি হয়নি। বৃষ্টি পিছিয়ে যাওয়ার ফলে ইলিশের প্রজনন সময়টাও পিছিয়েছে। এখন সাগরে থাকা ইলিশের ডিম কেবল পরিপক্ব হতে শুরু করেছে।’ পরিপূর্ণ পরিপক্ব হয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মিঠা পানিতে উঠে এলে শিগগিরই নদ-নদীতে ইলিশের সংকট দূর হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

মন্তব্য করুন: