• সাভার

  •  শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪

নগর জুড়ে

নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব সাভার

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: ০৯:৫৪, ৬ জুন ২০২৩

নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব সাভার

নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব সাভার

সাভারের হাট-বাজারগুলোতে অবাধে মিলছে নিষিদ্ধ পলিথিন। কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে ফল আর মুদির দোকানে ব্যবহার হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন। এতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, ক্ষতি হচ্ছে কৃষিজমির। দূষণ ঠেকাতে প্রশাসনের জোরালো কোনো উদ্যোগ নেই।

পরিবেশ রক্ষায় ২০০২ সালে পলিথিনের শপিংব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করে সরকার। এছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী পলিথিনে তৈরি সব ধরনের শপিংব্যাগ উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রি ও বিক্রির জন্য প্রদর্শন, মজুত-বিতরণ নিষিদ্ধ। এর ব্যত্যয় হলে জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে। অথচ এ আইন লঙ্ঘন করেই প্রশাসনের নাকের ডগায় বাজারগুলোতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে পলিথিন ব্যাগ।

সাভারের নামাবাজার, বাইপাইল, বলিভদ্র, জিরানী এলাকার বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, পলিথিন ব্যাগের ব্যবহারের করুণ চিত্র। কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে ফল আর মুদির দোকানে ব্যবহার হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন।

সাভারের বাইপাইল কাঁচামালের আড়তের পাশে পলিথিনের পাইকার আমজাদ হোসেন। তার দোকানের সামনে দাঁড়াতেই দেখা যায় পলিথিন ব্যাগ বিক্রির হিড়িক। আশপাশের খুচরা ব্যাবসায়ীরা চাহিদা মাফিক পলিব্যাগ কিনছেন। প্রকাশ্যেই মজুত রেখেছে বিপুল পরিমাণ পলিথিন ব্যাগ।

এত ব্যাগ মজুত কেন, এমন প্রশ্নে আমজাদ হোসেনের সহজ উত্তর ছিল—বিক্রির জন্য। কেউ কিছু বলে না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, কোনো সমস্যা নেই। আমিতো আর মাদক বিক্রি করছি না।’ কখনো কেউ অভিযান চালাননি?—এমন প্রশ্ন করতেই তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে দোকান থেকে নেমে বাইরে চলে যান।


কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি দোকানেই মিলছে পলিথিন ব্যাগ। বিক্রেতাদের পাশাপাশি ক্রেতাও স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করছেন এসব পলিথিন। শুধু বাইপাইলের এ কাঁচাবাজারটিতেই নয়, সাভারে ছোট-বড় প্রায় দুই শতাধিক বাজারে একই চিত্র।

সবজি কিনতে আসা বুলবুল আহমেদ বলেন, ‘বিক্রেতা দিয়েছে আমি নিয়েছি। তারা না দিলে আমার মতো কেউই এমন পলিথিন ব্যবহার করতেন না। তাছাড়া বাজারে বিকল্প কিছুই নেই যে ক্রেতারা ব্যবহার করবেন।’ বিক্রেতা সুরাজ মিয়া বলেন, ‘কেউ কোনো ব্যাগ নিয়ে বাজারে আসেন না। তাই আমরা বাধ্য হয়ে পলিথিনে বাজার দিয়ে দেই। বাজার পলিথিনে না দিলে ক্রেতা পাওয়া যায় না। তাই আমরা দিতে বাধ্য থাকি।’

পলিথিনের বিরূপ প্রভাব পড়েছে সাভারের কৃষিজমিতে। হাট-বাজারের এসব পলিথিন মিশে যাচ্ছে কৃষিজমিতে। চাষাবাদের সময় ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় অপচনশীল এ দ্রব্য।

৪০ বছর ধরে কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত মান্নান মিয়া বলেন, ‘এখন চাষ করতে গেলে অস্বাভাবিকভাবে মাটির নিচে পাওয়া যাচ্ছে পলিথিন। হাল (লাঙল) কিংবা কোদালের কোপের সঙ্গে উঠে আসে পলিব্যাগসহ প্লাস্টিকের টুকরা।’ তিনি বলেন, ‘আগে যা ফলন পেতাম তা আর এখন পাওয়া যায় না। বন্যার সময় ভেসে আসে এসব পলিব্যাগ।’


সাভারের আলহাজ আবদুল মান্নান ডিগ্রি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফরিদ হোসেন বলেন, ‘পলিথিন অপচনশীল প্লাস্টিক হওয়ায় দীর্ঘদিন পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকে। এতে মাটি ও পানি দূষিত হয়। মাটির উর্বরতা শক্তি ও গুণ নষ্ট হয়ে ফলন কমে যায়। পলিথিনের রাসায়নিক উপাদান গাছপালা, উদ্ভিদ ও মানবদেহের জন্যও ক্ষতিকর।’ সাভার নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন খান নঈম বলেন, প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে এখন উদাসীন মনে হয়। ছোট করে কয়েকটি অভিযানের খবর শুনলেও ব্যাপক আকারে তেমন ব্যবস্থা নেওয়ার খবর পাইনি।

তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম বলেন, বাজারগুলোতে অভিযান চালানো হয়। ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। তবে তারা শাস্তি পেলেও ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এজন্য ক্রেতা-বিক্রেতা সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।

মন্তব্য করুন: